উইকিপিডিয়া কি? | উইকিপিডিয়ার ইতিহাস, ব্যবহার ও উপকারিতা

উইকিপিডিয়া কি

আজকের ইন্টারনেটভিত্তিক জ্ঞানভান্ডারের যুগে “উইকিপিডিয়া” নামটি আমাদের সকলেরই পরিচিত। যখনই কোনো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই, গুগলে সার্চ দিলে প্রথমদিকেই উইকিপিডিয়ার লিংক ভেসে ওঠে। কিন্তু অনেকেই জানেন না – উইকিপিডিয়া কি, এটি কিভাবে কাজ করে, এবং এর পেছনে কে বা কারা রয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা জানবো উইকিপিডিয়া কি, ইতিহাস, এর কাজের পদ্ধতি ও ব্যবহারিক দিকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যা একজন সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, গবেষক কিংবা কন্টেন্ট নির্মাতার জন্যও অত্যন্ত উপকারী।

উইকিপিডিয়া কি?

উইকিপিডিয়া হলো একটি মুক্ত, অনলাইন বিশ্বকোষ যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা একত্রে সম্পাদনা ও আপডেট করতে পারে। এটি একটি নন-প্রফিট প্রজেক্ট, যার মালিকানা Wikimedia Foundation এর হাতে। উইকিপিডিয়া এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিশ্বের যেকোনো ব্যক্তি তথ্য খুঁজতে পারে এবং একইসাথে নিজেও নতুন তথ্য যুক্ত করতে পারে।

২০০১ সালে জিমি ওয়েলস (Jimmy Wales) এবং ল্যারি স্যাঙ্গার (Larry Sanger) এর উদ্যোগে উইকিপিডিয়ার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় জ্ঞানের ভাণ্ডার, যেখানে ৩০০টিরও বেশি ভাষায় লক্ষ লক্ষ নিবন্ধ রয়েছে। বাংলা ভাষাতেও উইকিপিডিয়ার একটি স্বতন্ত্র সংস্করণ রয়েছে, যেটি “বাংলা উইকিপিডিয়া” নামে পরিচিত।

উইকিপিডিয়ার বিশেষত্ব হলো – এটি বাণিজ্যিক নয়, খোলামেলা এবং গণসম্পাদনার মাধ্যমে চালিত। এর ফলে এটি প্রতিনিয়ত হালনাগাদ থাকে এবং পৃথিবীর যে কেউ, যে কোনো সময় এতে তথ্য সংযোজন বা সংশোধন করতে পারে – কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালার অনুসরণে।

উইকিপিডিয়ার ইতিহাস

উইকিপিডিয়ার জন্ম ২০০১ সালের ১৫ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট উদ্যোক্তা জিমি ওয়েলস (Jimmy Wales) এবং প্রযুক্তিবিদ ল্যারি স্যাঙ্গার (Larry Sanger) এর যৌথ উদ্যোগে। এটি শুরুতে একটি সহায়ক প্রকল্প হিসেবে গঠিত হয়েছিল Nupedia নামক একটি অনলাইন বিশ্বকোষের জন্য, যেখানে বিশেষজ্ঞরা কন্টেন্ট লিখতেন এবং সেটি সম্পাদনার পর প্রকাশিত হতো। তবে, এই প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত ধীর ও জটিল।

এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতেই তারা তৈরি করেন উইকিপিডিয়া, যা ছিল একটি “উইকি” প্ল্যাটফর্ম – অর্থাৎ, যেখানে যে কেউ সহজে কনটেন্ট তৈরি ও সম্পাদনা করতে পারে। এই ধারণাটি ছিল বিপ্লবাত্মক, কারণ এটি প্রথমবারের মতো সাধারণ ব্যবহারকারীদের জ্ঞান ভাগাভাগির সুযোগ করে দেয়।

প্রথমদিকে কেবল ইংরেজি ভাষায় শুরু হলেও, অল্প সময়ের মধ্যেই উইকিপিডিয়া বহু ভাষায় সম্প্রসারিত হয়। বাংলা উইকিপিডিয়া চালু হয় ২০০৪ সালের ২৭ জানুয়ারি। এরপর থেকে এটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানের উৎসে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে উইকিপিডিয়া বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোর একটি এবং লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিনিয়ত এতে তথ্য সংযোজন ও পরিবর্ধন করছেন, যা একে দিন দিন আরও সমৃদ্ধ করছে।

উইকিপিডিয়া কীভাবে কাজ করে?

উইকিপিডিয়ার কাজের মূল ভিত্তি হলো “সহযোগিতামূলক সম্পাদনা” (Collaborative Editing)। এটি এমন একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে যে কেউ নিবন্ধ সম্পাদনা, সংশোধন কিংবা নতুন তথ্য যুক্ত করতে পারে — শুধুমাত্র একটি উইকিপিডিয়া অ্যাকাউন্ট থাকলেই যথেষ্ট।

১. মুক্ত সম্পাদনা (Open Editing)

উইকিপিডিয়া একটি “উইকি” প্ল্যাটফর্ম– যার মানে হলো ব্যবহারকারীরা সরাসরি পেজ তৈরি, এডিট এবং আপডেট করতে পারেন। নিবন্ধে তথ্য সংযুক্ত বা সংশোধন করার জন্য সম্পাদকদের কোনো বিশেষ অনুমতি লাগে না, তবে কিছু নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা সুরক্ষিত থাকে যাতে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য এড়ানো যায়।

২. সূত্র ও নির্ভরযোগ্যতা

উইকিপিডিয়াতে নির্ভরযোগ্য উৎস (Reliable Sources) ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো তথ্য যোগ করার সময় সংশ্লিষ্ট উৎস বা রেফারেন্স দিতে হয় — যেমন: বই, সংবাদপত্র, জার্নাল, অথবা নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট। ভুল বা অযাচাইকৃত তথ্য সাধারণত দ্রুত অপসারণ করা হয়।

৩. স্বেচ্ছাসেবী সম্পাদকদের ভূমিকা

বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী সম্পাদক (Volunteers) প্রতিদিন উইকিপিডিয়া নিবন্ধ তৈরি ও তদারকি করে থাকেন। তাদের একটি বড় অংশ নিয়মিতভাবে মান যাচাই, ভণ্ডামি রোধ এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে কাজ করেন।

৪. নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি (Neutral Point of View – NPOV)

উইকিপিডিয়ার অন্যতম মূলনীতি হলো নিরপেক্ষতা। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা মতাদর্শকে অতিরিক্তভাবে পক্ষপাতিত্ব করে উপস্থাপন করা যাবে না। প্রতিটি বিষয়ের সব দিকই ভারসাম্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতে হয়।

৫. কমিউনিটি নিয়মনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি

উইকিপিডিয়ার কমিউনিটিতে বিভিন্ন নিয়মনীতি আছে, যেমন:

  • নতুন ব্যবহারকারীদের সহায়তা করা,
  • বিতর্ক মিটমাট করা,
  • ভালো নিবন্ধের মানদণ্ড বজায় রাখা ইত্যাদি।

উইকিপিডিয়ার মূল বৈশিষ্ট্য

উইকিপিডিয়া এমন একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম যার বৈশিষ্ট্যগুলো একে অন্যান্য বিশ্বকোষ ও তথ্যভাণ্ডার থেকে আলাদা করে তোলে। এটি শুধু একটি ওয়েবসাইট নয়, বরং একটি উন্মুক্ত, গণসম্পাদনাভিত্তিক জ্ঞানের ভাণ্ডার, যা প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। নিচে উইকিপিডিয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:

১. উন্মুক্ত সম্পাদনা (Open Editing)

যে কেউ উইকিপিডিয়ার নিবন্ধ সম্পাদনা করতে পারেন। এতে সাধারণ ব্যবহারকারী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গবেষকরাও অবদান রাখতে পারেন।

২. মুক্ত লাইসেন্স (Free License)

উইকিপিডিয়ার সব কনটেন্ট Creative Commons Attribution-ShareAlike (CC BY-SA) লাইসেন্সের আওতায় ফ্রি-তে ব্যবহারের অনুমতি দেয়, অর্থাৎ আপনি চাইলেই উইকিপিডিয়ার তথ্য ব্যবহার বা পুনঃপ্রকাশ করতে পারেন — নির্দিষ্ট শর্তে।

৩. বহু ভাষায় উপলব্ধ (Multilingual Support)

উইকিপিডিয়া বর্তমানে ৩০০+ ভাষায় উপলব্ধ। এর মধ্যে বাংলা উইকিপিডিয়া অন্যতম, যেখানে হাজার হাজার নিবন্ধ রয়েছে।

৪. স্বেচ্ছাসেবকভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম

উইকিপিডিয়ার কনটেন্ট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এতে কেউ পারিশ্রমিক পান না, বরং জ্ঞান ভাগাভাগির উদ্দেশ্যেই কাজ করেন।

৫. নিরপেক্ষতা বজায় রাখা (Neutral Point of View)

উইকিপিডিয়া সব সময় চেষ্টা করে নিরপেক্ষ ও তথ্যভিত্তিক কনটেন্ট উপস্থাপন করতে, যেন কোনো পক্ষপাতিত্ব না থাকে।

৬. রেফারেন্স ভিত্তিক তথ্য

উইকিপিডিয়াতে তথ্য সংযুক্ত করার সময় অবশ্যই বিশ্বস্ত উৎস থেকে রেফারেন্স দেওয়া বাধ্যতামূলক। এটি কনটেন্টের মান এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়।

৭. সার্বক্ষণিক আপডেট

উইকিপিডিয়ার তথ্য প্রতিনিয়ত আপডেট হয়, তাই এটি সবসময় আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করতে পারে।

উইকিপিডিয়া ব্যবহারের উপকারিতা

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে, উইকিপিডিয়া হয়ে উঠেছে জ্ঞানের এক অবিচ্ছেদ্য উৎস। এর সহজ ব্যবহার, তথ্যের বিশাল সংগ্রহ এবং সর্বজনীনতা একে অন্যান্য তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট থেকে আলাদা করেছে। নিচে উইকিপিডিয়া ব্যবহারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

১. তথ্যের সহজলভ্যতা

উইকিপিডিয়া এক ক্লিকেই যেকোনো বিষয়ের উপর বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। শিক্ষার্থী, গবেষক কিংবা সাধারণ ব্যবহারকারী – সবাই খুব সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পান।

২. বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য

এটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং বিজ্ঞাপনমুক্ত প্ল্যাটফর্ম। ব্যবহারকারীদের কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন বা অর্থপ্রদান করতে হয় না।

৩. প্রতিনিয়ত হালনাগাদ হয়

উইকিপিডিয়ার কনটেন্ট নিয়মিতভাবে আপডেট হয়। নতুন তথ্য, ঘটনা বা আবিষ্কার দ্রুত যোগ করা হয়, ফলে পাঠক সর্বশেষ তথ্য পান।

৪. বহু বিষয়ে কভারেজ

উইকিপিডিয়াতে বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, প্রযুক্তি, খেলাধুলা, রাজনীতি, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি সহ হাজারো বিষয়ে তথ্য রয়েছে — যা একে অল-ইন-ওয়ান তথ্যভাণ্ডার বানিয়েছে।

৫. বিশ্বস্ত রেফারেন্স উৎস

উইকিপিডিয়ার প্রতিটি তথ্যের পেছনে থাকে বিশ্বস্ত রেফারেন্স, যা ব্যবহারকারীদের তথ্য যাচাই করতে সহায়তা করে। গবেষণার জন্য এটি একটি সহায়ক মাধ্যম।

৬. ভাষা নির্বাচন সুবিধা

উইকিপিডিয়া প্রায় সব প্রধান ভাষায় উপলব্ধ — বিশেষ করে বাংলা ভাষায়ও এটি বিশাল পরিমাণ তথ্য সরবরাহ করে, যা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য দারুণ সুবিধা।

৭. শিখন ও গবেষণায় সহায়ক

ছাত্রছাত্রী ও গবেষকরা উইকিপিডিয়া থেকে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে তাদের পড়াশোনা বা গবেষণার ভিত্তি তৈরি করতে পারেন।

আরও পড়ুন- ট্রেডমার্ক কি? | ট্রেডমার্ক এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও গুরুত্ব

কিভাবে উইকিপিডিয়ায় অবদান রাখা যায়?

উইকিপিডিয়া এমন একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের যেকোনো ব্যক্তি জ্ঞান ভাগ করে নিতে পারেন। আপনি চাইলে নতুন নিবন্ধ তৈরি, পুরনো তথ্য সংশোধন, বানান বা বাক্য গঠন ঠিক করা, কিংবা নতুন রেফারেন্স যোগ করেও অবদান রাখতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি উল্লেখ করা হলো:

১. একটি উইকিপিডিয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন

উইকিপিডিয়ায় অবদান রাখতে প্রথমেই বাংলা উইকিপিডিয়া ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলুন। এটি ফ্রি এবং খুবই সহজ।

২. বিদ্যমান নিবন্ধ সম্পাদনা করুন

আপনি যেকোনো নিবন্ধ খুলে “সম্পাদনা করুন” বাটনে ক্লিক করে লেখা সংশোধন, তথ্য আপডেট বা বানান ঠিক করতে পারেন। তবে চেষ্টা করবেন নির্ভরযোগ্য উৎস ব্যবহার করতে।

৩. নতুন নিবন্ধ তৈরি করুন

যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এখনও কোনো পৃষ্ঠা না থাকে, তাহলে আপনি চাইলে নতুন নিবন্ধ তৈরি করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে উইকিপিডিয়ার মানদণ্ড ও রেফারেন্স নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

৪. রেফারেন্স যোগ করুন

যেকোনো তথ্য নির্ভরযোগ্য করতে তথ্যের উৎস (source/reference) যুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি অন্যের লেখা পৃষ্ঠা থেকেও রেফারেন্স যোগ করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।

৫. আলোচনায় অংশগ্রহণ করুন

প্রতিটি পৃষ্ঠার সাথে একটি “আলোচনা পৃষ্ঠা” থাকে যেখানে ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আপনি চাইলে সেখানে যুক্ত হয়ে মতামত দিতে পারেন বা অন্যদের সহযোগিতা করতে পারেন।

৬. উইকিপিডিয়া নির্দেশিকা পড়ুন

উইকিপিডিয়ায় অবদান রাখার আগে তাদের সম্পাদনা নীতি, নিরপেক্ষতা নীতি, এবং কপিরাইট গাইডলাইন সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। এতে আপনার কাজ মানসম্পন্ন হবে এবং মুছে ফেলার ঝুঁকি কমবে।

উল্লেখযোগ্য টিপস:

  • সঠিক বানান ও ব্যাকরণ মেনে লিখুন
  • পক্ষপাতহীন ভাষা ব্যবহার করুন
  • কপিরাইটযুক্ত কনটেন্ট কপি-পেস্ট করবেন না
  • বিশ্বস্ত ও যাচাইকৃত সূত্র ব্যবহার করুন

উইকিপিডিয়া বনাম অন্যান্য বিশ্বকোষ

উইকিপিডিয়া আজকের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন বিশ্বকোষ হলেও, এটি ছাড়াও Britannica, Encarta, ও Oxford Encyclopedia-এর মতো অনেক ঐতিহ্যবাহী ও নির্ভরযোগ্য বিশ্বকোষ রয়েছে। তবে উইকিপিডিয়ার বৈশিষ্ট্য ও কার্যপ্রণালী অন্যান্য বিশ্বকোষ থেকে কিছুটা আলাদা। নিচে উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য বিশ্বকোষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:

১. মালিকানা ও সম্পাদনা

  • উইকিপিডিয়া: উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম; যে কেউ সম্পাদনা করতে পারে।
  • অন্যান্য বিশ্বকোষ: সাধারণত বিশেষজ্ঞ বা নির্ধারিত সম্পাদকরা কনটেন্ট তৈরি ও যাচাই করে থাকেন।

২. খরচ ও প্রবেশাধিকার

  • উইকিপিডিয়া: ১০০% ফ্রি; ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই যে কেউ ব্যবহার করতে পারে।
  • অন্যান্য বিশ্বকোষ: অনেক সময় সাবস্ক্রিপশন বা অর্থপ্রদানের প্রয়োজন হয় (যেমন: Britannica Premium)।

৩. তথ্যের পরিমাণ ও আপডেটের গতি

  • উইকিপিডিয়া: অসংখ্য বিষয়ে লেখা রয়েছে, এবং প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে।
  • অন্যান্য বিশ্বকোষ: বিষয় সংখ্যা সীমিত এবং আপডেট ধীরগতির।

৪. নিরপেক্ষতা ও মান

  • উইকিপিডিয়া: নিরপেক্ষতার চেষ্টা করে, তবে যেহেতু যেকেউ সম্পাদনা করতে পারে, তাই মাঝে মাঝে ভুল বা পক্ষপাত থাকতে পারে।
  • অন্যান্য বিশ্বকোষ: অধিকাংশ সময় তথ্য নির্ভরযোগ্য, কারণ তা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা যাচাই করা হয়।

৫. ভাষাগত বৈচিত্র্য

  • উইকিপিডিয়া: ৩০০+ ভাষায় উপলব্ধ, যার মধ্যে বাংলা অন্যতম।
  • অন্যান্য বিশ্বকোষ: বেশিরভাগই ইংরেজি বা সীমিত কিছু ভাষায় প্রকাশিত।

উইকিপিডিয়া সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা

উইকিপিডিয়া নিয়ে অনেকের মনেই কিছু ভুল ধারণা বা ভুল বিশ্বাস রয়েছে, যা একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে বাধা দেয়। এই ভুল ধারণাগুলো দূর করা জরুরি, যেন সবাই এই মুক্ত বিশ্বকোষের সঠিক ব্যবহার ও মূল্য বুঝতে পারে।

১. “উইকিপিডিয়ার সব তথ্য ভুল”

অনেকেই মনে করেন উইকিপিডিয়ায় যেহেতু যেকেউ তথ্য সম্পাদনা করতে পারে, তাই এটি অনির্ভরযোগ্য। বাস্তবতা হলো, উইকিপিডিয়ার জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধগুলো নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে যাচাই করা হয় এবং ভুল তথ্য সাধারণত দ্রুত সংশোধন করা হয়।

২. “উইকিপিডিয়া কোনো শিক্ষামূলক উৎস নয়”

এটি সম্পূর্ণ ভুল। যদিও একাডেমিক রেফারেন্স হিসেবে সরাসরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ, বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং উৎসের লিংক খোঁজার জন্য উইকিপিডিয়া একটি চমৎকার ও কার্যকর উৎস।

৩. “উইকিপিডিয়া শুধু ইংরেজিতে”

অনেকে ভাবেন উইকিপিডিয়া শুধু ইংরেজি ভাষাতেই রয়েছে। বাস্তবে এটি বর্তমানে ৩০০+ ভাষায় রয়েছে, যার মধ্যে বাংলা উইকিপিডিয়া-ও একটি সক্রিয় ও দ্রুত বাড়তে থাকা সংস্করণ।

৪. “সবাই যা খুশি লিখে দিতে পারে”

হ্যাঁ, উইকিপিডিয়া উন্মুক্ত সম্পাদনার সুযোগ দেয়, তবে এটি নিয়মবদ্ধ ও পর্যবেক্ষিত। সন্দেহজনক সম্পাদনা, ভুয়া তথ্য বা অপব্যবহার রোধে স্বেচ্ছাসেবক প্রশাসকরা নিয়মিত নজরদারি করেন।

৫. “উইকিপিডিয়াতে অবদান রাখতে বিশেষজ্ঞ হতে হয়”

উইকিপিডিয়াতে অবদান রাখার জন্য পিএইচডি বা প্রফেশনাল ডিগ্রি লাগেনা। যেকোনো সচেতন ও তথ্যভিত্তিক ব্যবহারকারী, নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্যবহার করে অবদান রাখতে পারেন।

উপসংহার

উইকিপিডিয়া শুধুমাত্র একটি অনলাইন বিশ্বকোষ নয়, বরং এটি জ্ঞান ভাগাভাগির একটি মুক্ত প্ল্যাটফর্ম — যেখানে যেকোনো ব্যক্তি নিজের জ্ঞান দিয়ে অন্যকে উপকৃত করতে পারে। এর উন্মুক্ততা, বহুভাষিকতা এবং সহজলভ্যতা একে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইটে পরিণত করেছে। যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবে সচেতনভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা উইকিপিডিয়াকে একটি শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের উৎস হিসেবে কাজে লাগাতে পারি।

তাই, তথ্য খোঁজা হোক বা তথ্য যোগ করার ইচ্ছা — উইকিপিডিয়া হোক আপনার প্রতিদিনের তথ্য অনুসন্ধানের বিশ্বস্ত সঙ্গী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *